#বকখালি: সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে বুধবার ভয়ংকর ট্রলারডুবির (trawler Turned Over) মুখে পড়তে হয়েছিল ওঁদের। ওঁরা মানে নামখানার একদল মৎস্যজীবী (Fishermen)। ঘটনায় দু’জন প্রাণে বাঁচলেও মৃত্যু হয়েছে ১০ মৎস্যজীবীর (Fishermen)। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নিখোঁজ থাকা আরও এক মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধার হয়েছে সমুদ্র থেকে। তাঁরা সকলেই নামখানার হরিপুর, দেবনিবাস, পাতিবুনিয়া, মহারাজগঞ্জ, শিবপুর, রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামগুলিতে নেমেছে শোকের ছায়া। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মৃতদের পরিবার পরিজন।
দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন স্বামীকে, কেউ ছেলেকে। নামখানায় তাই শোকের ছায়া। ৬২ বছরের বৃদ্ধ বাবা গোপাল দাস ছেলে হারিয়ে পাথর। নামখানার (Namkhana) দেবনিবাসের বাসিন্দা গোপাল দাসের দুই ছেলে সৈকত ও সৌরভ দু’জনেই প্রায় সপ্তাখানেক আগে এফ বি হৈমবতী ট্রলারে চেপে সমুদ্রে মাছ ধরতে বের হন। বুধবার ভোরে সমুদ্র থেকে ফেরার পথে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরে রক্তেশ্বরী চরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উলটে যায়। ট্রলারের খোলের মধ্যেই আরও ছয় মৎস্যজীবীর সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন দুই ভাই। ভিতর থেকে বেরোতে পারেননি তাঁরা। ট্রলারের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় তাঁদের মৃতদেহ।
শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে অঝোর ধারায় কেঁদেই চলেছেন সৈকতের স্ত্রী। “আমি তো ভগবানে বিশ্বাস করি। কী এমন দোষ করলাম যে ভগবান ওদের কেড়ে নিলেন আমার কোল থেকে। সত্যিই যদি তিনি থেকে থাকেন তবে চাইব ভগবান যেন ওদের শান্তি দেন। ওরা যেখানে গিয়েছে, সেখানে যেন ভাল থাকে।”
ট্রলার দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুরজিৎ। ওর বাবা বুদ্ধদেব মাইতির নিথর দেহ উদ্ধার হয় বুধবার রাতে হৈমবতী ট্রলারের খোলের ভিতর থেকেই। ও এখনও জানে না বাবা আর তার কাছে আসবে না কোনওদিনই। ছোট্ট সুরজিৎ জানায়, “বাবা মাছ ধরতে গিয়েছে। কবে ফিরবে জানিনা।” ছেলে বারবার তার মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, “বাবা কবে আসবে?” ছেলের প্রশ্নের কোনও উত্তরই নেই বুদ্ধদেবের স্ত্রী সাবিত্রীর কাছে। স্বামী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। কাঁদতে কাঁদতে নিজের মনেই বলে চলেছিলেন, “এই সেদিনও তো তুমি ফোন করে বললে, আমরা বাড়ি ফিরছি। বললে, মশারিটা ঠিক করে টাঙাস। নইলে গেঁড়িপোকা বাচ্চাদের কামড়াবে। ওদের খেয়াল রাখিস।” আর ফেরা হল না সুরজিতের বাবার। সমুদ্র যেন টেনে নিয়েছে তাঁকেও।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজের তালিকাতেই ছিলেন বছর পঞ্চান্নর অনাদি শাসমল। স্বামী-স্ত্রী ও দুই ছেলে, তিন মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসার। একমাত্র রোজগেরে। ট্রলারের (Trawler) খোলের মধ্যে দেহ উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষীণ আশা ছিল স্ত্রী সারথীদেবীর। কিন্তু কোথায় যেন ভয় কেঁপেছে বুক। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় অনাদি শাসমলের দেহ মিলেছে বকখালির কাছে সমুদ্র তীরবর্তী দোনলা এলাকা থেকে। স্ত্রী সারথীদেবী অস্ফুটে বিড়বিড় করেন, “ভেবেছিলাম এবার এলে বলব আর সাগরে না যেতে। সেকথা আর বলা হল না আমার।”